বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সালমানের ‘খান একাডেমি’ পেয়েছে ‘গুগুল’-এর ২০ লাখ ডলার মূল্যমানের পুরস্কার। এক লাখ চুয়ান্ন হাজার প্রকল্পের মধ্য থেকে শিক্ষা বিভাগে সেরা নির্বাচিত হয়েছে খান একাডেমির বিনা মূল্যে শিক্ষামূলক অনলাইন ভিডিও টিউটরিয়াল। এই অর্জনের খবর পেয়ে আমরা ‘স্বপ্ন নিয়ে’র পক্ষ থেকে সালমানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ৩ অক্টোবর সালমান ই-মেইলে জানান তাঁর স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা।
২০ লাখ ডলারের পুরস্কার পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। খান একাডেমি এত দিন স্বল্প পুঁজি নিয়ে কাজ করছিল, এই পুরস্কার আমাদের সামনের ধাপে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। এত এত যোগ্য ও ভালো প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে খান একাডেমিকে বেছে নেওয়ার কারণ হচ্ছে, আমরা সত্যিই মানবকল্যাণে এমন একটি কাজ করছি, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এক মাসে আমাদের পোর্টালে পাঁচ লাখ ব্যবহারকারী নিবন্ধন করেছে এবং এখানে প্রায় দুই কোটি ৪০ লাখ বার ভিডিও দেখা হয়েছে, যার পেছনে মোটামুটি আমার নিজের শ্রম ছাড়া তেমন কোনো ব্যয়ও হয়নি। এখন আমরা কিছু পেশাদার প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে পারব, তখন বিশ্বের শীর্ষ ভাষাগুলোয় এ তথ্য অনুবাদ করা সম্ভব হবে।
অনুবাদের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা আমাদের কাছে অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। এ মুহূর্তে তথ্যগুলো বাংলায় অনুবাদের জন্য আমরা সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো শিক্ষক অথবা অনুবাদক খুঁজছি, যাঁরা মূলত আমাদের ভিডিওগুলোকে সরাসরি বাংলায় রূপান্তর করতে পারবেন কিংবা কিছু অংশ আবার নতুন করে তৈরি করবেন। আমাদের লক্ষ্য, কিছু অভিজ্ঞ স্বেচ্ছাসেবককে কাজে লাগানো, যাঁদের কাজ মূলত সমন্বয় করব আমরা। আমরা বিশ্বাস করি, নিজের দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীর সার্বিক অগ্রগতির জন্য সত্যি এমন কোনো কাজ করার সুযোগ এখানে মিলবে, যে কারণে এখানে বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্য থেকে নিশ্চয়ই আগ্রহীদের সাড়া পাব। এই ভিডিওগুলো বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ৩০ কোটির বেশি বাঙালি অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারবে। এগুলো মধ্যম পর্যায়ের স্কুলশিক্ষার্থীদের বাড়তি শিক্ষা উপকরণ হিসেবে যেমন কাজে আসবে, তেমনি হাতেখড়ি দেবে স্কুলে না-যাওয়া শিশুর প্রথম পাঠেও। কেননা এই তথ্য-উপাত্ত মূলত কখনোই পুরোনো হয়ে যাওয়ার নয়, কারণ বিগত শত বছরেও মৌলিক গণিতে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাংলা ভাষাভাষী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ ভিডিওগুলো খুবই কাজে আসবে। এমনকি এগুলো ভাষার ঐতিহ্য ও মৌলিকতা সংরক্ষণেও কাজ করবে কোনো না কোনোভাবে। আমরা প্রথম ধাপে অন্তত এক হাজার ভিডিও বাংলায় অনুবাদ করার কাজ যত শিগগিরই সম্ভব শুরু করে দেব, যা দুই বছরে শেষ করা সম্ভব।
আশা করছি, খান একাডেমি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের শিখতে এবং নিজের দেশের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে। আমি মনে করি, তারা প্রথমেই খান একাডেমির শিক্ষামূলক ভিডিওগুলোকে নিজেদের পড়াশোনার কাজে লাগাতে পারে। একবার তারা যখন এখানে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, তার পর তারাই সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের খান একাডেমির তথ্যগুলোর সুবিধা পাইয়ে দিতে এগিয়ে আসতে পারবে। আমি এটাও বিশ্বাস করি যে অনুবাদে অভিজ্ঞ সব বয়সী বাঙালিরা এই শিক্ষামূলক তথ্যভান্ডার বাংলায় অনুবাদে এগিয়ে আসবে আমাদের সহায়তা করার জন্য। আগ্রহীদের ই-মেইলে (translations@khanacademy.org) যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করছি।
সালমান, ৩ অক্টোবর ২০১০
0 comments:
Post a Comment