‘সুপ্রভাত, ঘণ্টাতিনেক পর আমরা ডিসেপশন আইল্যান্ডে পৌঁছে যাব। এ দ্বীপ দুনিয়ার মেলা নাবিককে ধোঁকা দিয়েছে, কিন্তু আজ তোমার প্রত্যাশাটা ঠিকই পূরণ করবে।’ এক বাটি গরম স্যুপ নিয়ে দোদুল্যমান টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতেই এ কথা বলে আমাকে স্বাগত জানাল ব্রেন্ট হিউস্টন। আমাদের জাহাজ তখন দক্ষিণ মহাসাগরে ভাসমান বরফের অন্তহীন জঙ্গলে গুটি গুটি এগিয়ে চলছে। গতকালও জাহাজটি খণ্ড বরফের এই কণ্টকশয্যা পার হয়েছে অক্ষত দেহে। তবে অভিযাত্রী সবাই অক্ষত থাকেননি। অনেকেই সমুদ্রপীড়ায় কুপোকাত হয়ে আজ ব্রেকফাস্টে গরহাজির। বাইরে ঝকঝকে রোদ। পানিতে ছোঁ মেরে মাছ শিকার করছে একটি অ্যালব্যাট্রস। আমি বললাম, ‘কথাটা মনে রেখো ব্রেন্ট, আমার আশা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কিন্তু জাহাজে ফিরব না। তখন ক্যাপ্টেন ডেমেল যদি মাইকের আওয়াজ বাড়িয়ে জাহাজ কাঁপিয়ে অনুপস্থিত যাত্রীর মুণ্ডুপাত করে তো সব শেষ তোমার।’
ব্রেন্ট হিউস্টন আমেরিকার পাখিবিদ, গবেষণার কাজে তৃতীয়বারের মতো অ্যান্টার্কটিকা সফরে এসেছে। আমার প্রথম সফর। প্রতারণা দ্বীপে নাকের ডগায় স্কুয়া আর পিন্টাডো পেট্রেল বসে থাকে বলে গল্প শুনিয়ে সে আমার প্রত্যাশা তুঙ্গে তুলেছে। বইয়ে পড়েছি, শত বছর আগে দক্ষিণ মহাসাগরে পিন্টাডো পেট্রেল দেখে অভিযাত্রী দল বুঝতে পারত, তারা অ্যান্টার্কটিক উপকূলের কাছে এসে গেছে। পেট্রেল পাখির দল অ্যালব্যাট্রস, স্কুয়া আর পেঙ্গুইনের মতো মাসের পর মাস সমুদ্রে ভেসে থাকতে পারে না। রাতে তাদের মাটিতে ফিরতে হয়। সমুদ্রে তাদের উড়তে দেখলে বোঝা যায় ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও মাটি আছে। ব্রেন্ট বলেছে, প্রতারণা দ্বীপে পেট্রেল আর স্কুয়া পাখির দল বাসা বাঁধে। আমি আশা করে আছি, কাছে গিয়ে সেসব দেখতে পাব।
প্রতারণা দ্বীপটি আসলে অ্যান্টার্কটিক উপকূলের এক অগ্নিগিরি। লাভা জমে সাগরের পানির ওপর মাথা তুলেছে বলেই একে দ্বীপ বলা হয়। অগ্নিগিরির জ্বালামুখের মধ্যেও আছে সমুদ্রের পানি। বাইরে থেকে শুধু লাভার পাহাড় মনে হলেও ভেতরে এর বিশাল নিস্তরঙ্গ হ্রদ—দুর্গম দক্ষিণ সাগরে এক বিরল পোতাশ্রয়। তবে জ্বালামুখের যে ফাটল দিয়ে এ হ্রদে জাহাজ ঢুকতে পারে বহুকাল সেটা অনাবিষ্কৃত ছিল। আবিষ্কারের পর মানুষ এর নাম দিয়েছে ‘প্রতারণা দ্বীপ’—যেন এ দ্বীপ আগে ইচ্ছে করে আশ্রয়সন্ধানী নাবিকদের প্রতারিত করেছে।
আমরা সবাই এখন প্রতারণা দ্বীপের দিকে চেয়ে আছি। ব্রেন্ট ও আমি পাখি দেখার জন্য, আর অন্য যাত্রীরা অগ্নিগিরির উত্তপ্ত হ্রদে নামতে উন্মুখ। উত্তেজনার শেষ নেই। দ্বীপের পাথুরে দেয়াল জাহাজের কাছে এসে গেলে সমুদ্রপীড়ায় কাবু অভিযাত্রীরাও মাথা খাড়া করল। ক্যাপ্টেন ডেমেল নিপুণ হাতে জাহাজ চালিয়ে দেয়ালের সুড়ঙ্গ দিয়ে আমাদের নিয়ে গেল অগ্নিগিরির ভেতরে। জাহাজ নোঙর ফেললে আমরা রবারের ডিঙিতে চড়ে ডাঙার দিকে রওনা হলাম। এক দশক আগে অগ্নিগিরির একটা বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এখন সে ঘুমন্ত, চারদিক সুনসান, পানিতে বুদবুদ উঠছে, বাতাসে গন্ধকের গন্ধ।
ডাঙায় পা রেখে উত্ফুল্ল সহযাত্রীরা সমুদ্রস্নানে নেমে গেল। আমাদের প্রত্যাশা তখনো পূরণ হয়নি। চারদিকে স্কুয়া আর পিন্টাডো পেট্রেলের ওড়াউড়ি চলছে। লাভার ফাঁকে ফাঁকে তারা বাসা বেঁধেছে। আমরা পাহাড়ের দেয়াল বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। কাছ থেকে সাধ মিটিয়ে সব দেখতে চাই। অ্যান্টার্কটিকার প্রাণী নির্ভয়ে মানুষের কাছে আসে। তাদের উদ্বেগের কারণ না হয়েই অনেক কাছে যাওয়া গেল। তারপর তৃপ্তমনে আমরা অবতরণ শুরু করলাম।
ব্রেন্ট হিউস্টন আমেরিকার পাখিবিদ, গবেষণার কাজে তৃতীয়বারের মতো অ্যান্টার্কটিকা সফরে এসেছে। আমার প্রথম সফর। প্রতারণা দ্বীপে নাকের ডগায় স্কুয়া আর পিন্টাডো পেট্রেল বসে থাকে বলে গল্প শুনিয়ে সে আমার প্রত্যাশা তুঙ্গে তুলেছে। বইয়ে পড়েছি, শত বছর আগে দক্ষিণ মহাসাগরে পিন্টাডো পেট্রেল দেখে অভিযাত্রী দল বুঝতে পারত, তারা অ্যান্টার্কটিক উপকূলের কাছে এসে গেছে। পেট্রেল পাখির দল অ্যালব্যাট্রস, স্কুয়া আর পেঙ্গুইনের মতো মাসের পর মাস সমুদ্রে ভেসে থাকতে পারে না। রাতে তাদের মাটিতে ফিরতে হয়। সমুদ্রে তাদের উড়তে দেখলে বোঝা যায় ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও মাটি আছে। ব্রেন্ট বলেছে, প্রতারণা দ্বীপে পেট্রেল আর স্কুয়া পাখির দল বাসা বাঁধে। আমি আশা করে আছি, কাছে গিয়ে সেসব দেখতে পাব।
প্রতারণা দ্বীপটি আসলে অ্যান্টার্কটিক উপকূলের এক অগ্নিগিরি। লাভা জমে সাগরের পানির ওপর মাথা তুলেছে বলেই একে দ্বীপ বলা হয়। অগ্নিগিরির জ্বালামুখের মধ্যেও আছে সমুদ্রের পানি। বাইরে থেকে শুধু লাভার পাহাড় মনে হলেও ভেতরে এর বিশাল নিস্তরঙ্গ হ্রদ—দুর্গম দক্ষিণ সাগরে এক বিরল পোতাশ্রয়। তবে জ্বালামুখের যে ফাটল দিয়ে এ হ্রদে জাহাজ ঢুকতে পারে বহুকাল সেটা অনাবিষ্কৃত ছিল। আবিষ্কারের পর মানুষ এর নাম দিয়েছে ‘প্রতারণা দ্বীপ’—যেন এ দ্বীপ আগে ইচ্ছে করে আশ্রয়সন্ধানী নাবিকদের প্রতারিত করেছে।
আমরা সবাই এখন প্রতারণা দ্বীপের দিকে চেয়ে আছি। ব্রেন্ট ও আমি পাখি দেখার জন্য, আর অন্য যাত্রীরা অগ্নিগিরির উত্তপ্ত হ্রদে নামতে উন্মুখ। উত্তেজনার শেষ নেই। দ্বীপের পাথুরে দেয়াল জাহাজের কাছে এসে গেলে সমুদ্রপীড়ায় কাবু অভিযাত্রীরাও মাথা খাড়া করল। ক্যাপ্টেন ডেমেল নিপুণ হাতে জাহাজ চালিয়ে দেয়ালের সুড়ঙ্গ দিয়ে আমাদের নিয়ে গেল অগ্নিগিরির ভেতরে। জাহাজ নোঙর ফেললে আমরা রবারের ডিঙিতে চড়ে ডাঙার দিকে রওনা হলাম। এক দশক আগে অগ্নিগিরির একটা বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এখন সে ঘুমন্ত, চারদিক সুনসান, পানিতে বুদবুদ উঠছে, বাতাসে গন্ধকের গন্ধ।
ডাঙায় পা রেখে উত্ফুল্ল সহযাত্রীরা সমুদ্রস্নানে নেমে গেল। আমাদের প্রত্যাশা তখনো পূরণ হয়নি। চারদিকে স্কুয়া আর পিন্টাডো পেট্রেলের ওড়াউড়ি চলছে। লাভার ফাঁকে ফাঁকে তারা বাসা বেঁধেছে। আমরা পাহাড়ের দেয়াল বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। কাছ থেকে সাধ মিটিয়ে সব দেখতে চাই। অ্যান্টার্কটিকার প্রাণী নির্ভয়ে মানুষের কাছে আসে। তাদের উদ্বেগের কারণ না হয়েই অনেক কাছে যাওয়া গেল। তারপর তৃপ্তমনে আমরা অবতরণ শুরু করলাম।
0 comments:
Post a Comment