Total Pageviews

Sunday, June 12, 2011

তুহিন বড়ুয়াঃ বিজ্ঞাপন ফার্ম ও প্রডিউসিংয়ে সফল মানুষ


undefined
ক্যারিয়ার হিসেবে মিডিয়া ব্যবসা কেন বেছে নিলেন?
তুহিন বড়ুয়াঃ আসলে আমার মিডিয়া ব্যবসা শুরু হয় আমার এক বন্ধু কহিনূরের উৎসাহে। সে গ্রম্নপ থিয়েটার করতো। একদিন কহিনূর আমাকে বললো, চল নাটকে বিনিয়োগ করি। মোটামুটি ভালো লাভ হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে কাজে নেমে পড়ি। তখন একুশে টিভি নাটকগুলো কিনে নিতো। প্রথম নাটকের নাম ছিল ‘নষ্টে কষ্টে জীবন’। নাটকটি একুশে টিভিতে প্রচার করা হলো। যদিও নাটকটিতে লাভ না হয়ে ক্ষতি হয়েছিল। তারপরও প্রচার হয়েছিল, এতেই খুশি ছিলাম। এরপরই ‘ঘাটের মানুষ’ নামে আরেকটি খন্ড নাটক করি। তারপর ধারাবাহিক নাটকে বিনিয়োগ করলাম। প্রথম ধারাবাহিক নাটকটির নাম ছিল ‘এবং বিয়ে’। এরপর যখন দেখলাম সবাই আমাকে চিনছে, সবার কাছে পরিচিতি বাড়ছে, তখন ভালোই লাগতো। এভাবেই মিডিয়া ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি।

নাটক প্রডিউসের পাশাপাশি আর কি ধরনের কাজে জড়িত আছেন?
তুহিন বড়ুয়াঃ আমার মূল ব্যবসা নাটকে বিনিয়োগ করা। আমার প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রথিক। এ প্রথিকের ব্যানার থেকে আমার সব নাটক প্রচার হয়। এছাড়া বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ের সঙ্গেও জড়িত। ‘রেড চিলি’ নামে একটা ফার্ম আছে, যেখানে আমরা ছয়জন মিলে কাজ করছি। এখানে আমরা বিভিন্ন স্পন্সর জোগাড় বা কোনো নাটক বিক্রি করে দিই কমিশনের বিনিময়ে। আসলে আমার অন্য কোনো ব্যবসার প্রতি আকর্ষণ কম ছিল আর এটা কপালে লেগে গেছে, তাই এখানেই কাজ করছি। তাছাড়া চাকরির বাজারে অনেক কষ্ট করতে হয়। তারপরও সময়মতো বেতন হয় না, যেটা আমার পছন্দ ছিল না, মাস শেষে যে টাকা পাবো তা দিয়েই পুরো মাস চলতে হবে। নিজে ব্যবসা করছি, আয় করছি এবং নিজের মতো করে খরচ করছি। এটাই অনেক শান্তির বিষয়।
যেহেতু আপনি অনেকদিন এ ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত, শোনা যায় চ্যানেলগুলো টাকা আটকিয়ে রাখে- এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
তুহিন বড়ুয়াঃ আগে চ্যানেলগুলো এভাবে টাকা ধরে রাখতো না। রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য বর্তমানে চ্যানেলের মালিকরা অর্থ সঙ্কটে রয়েছেন, তাই আমাদের টাকা আটকিয়ে রাখছে। আগে যেটা হতো নাটক প্রচারের দুই-তিন মাসের মধ্যেই টাকা পরিশোধ করে দিতো। এই ব্যপারটা মিডিয়ায় আগে থেকেই হয়ে আসছে। তবে বর্তমানে যে অবস্থা চলছে চ্যানেলগুলোতে এটা খুবই খারাপ একটা সময়, যার ফলে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে দিন আনে দিন খায়- এ রকম অবস্থা। আমার ভাগ্যটা একটু ভালো এদিক দিয়ে। যখন থেকে এ সমস্যা শুরু হয়েছে, তখন আমার প্রডাকশন অনেক কম ছিল। ফলে আমি তেমন একটা ধরা খাইনি। আমি মনে করি, কোনো কোনো চ্যানেলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের জন্য এ রকম হয়েছে। আবার কোনো কোনো চ্যানেলের মন-মানসিকতাও পরিবর্তন করা দরকার। চ্যানেলগুলো অন্যদের যেভাবে মূল্যায়ন করে, আমরা যারা প্রোগ্রাম সরবরাহ করি, তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। কিন্তু এ লোকগুলোই একটা চ্যানেলকে বাঁচিয়ে রাখে বিভিন্ন প্রোগ্রাম সরবরাহ করে। বর্তমানে অনেক চ্যানেলই নিজেরা প্রোগ্রাম করছে, নিজেরাই মার্কেটিং করছে, এর ফলে প্রোগ্রামের মান কিছুটা হলেও কমে আসছে। কিন্তু যদি এগুলো অন্য দশজন প্রডিউসারকে বুঝিয়ে দিতো, তাহলে অনেক ভালো ও ভিন্ন মাত্রার প্রোগ্রাম নির্মাণ হতো। মানুষ বলে না, দশের লাঠি একের বোঝা। তখন দশজনের মাথাব্যথা থাকতো চ্যানেল ও প্রোগ্রাম নিয়ে।
বিজ্ঞাপন ফার্মের ব্যবসায় ক্যারিয়ার গঠনে কতোটুকু ঝুঁকিমুক্ত?
তুহিন বড়ুয়াঃ পৃথিবীর প্রতিটা ব্যবসায়েই ঝুঁকি আছে। তারপরও আমি মনে করি, এখানে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। ব্যবসাটা হলো ক্রিয়েটিভিটি। তাই এটা শুরুর আগে অনেক কিছু জেনে-শুনে তারপর শুরু করা প্রয়োজন বলে মনে করি। অবশ্যই নিজস্ব কিছু জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। মিডিয়া ব্যবসা যেহেতু এজেন্সি ব্যবসা, তাই নেক থাকাটা প্রয়োজন। শুধু টাকা থাকলেই চলবে না, সংস্কৃতিমনাও হতে হবে।
নতুন এক উদ্যোক্তা এ ব্যবসা শুরু করতে চাইলে তাকে কি কি যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হয়?
তুহিন বড়ুয়াঃ আগেই বলেছি, খোদা প্রদত্ত কিছু জ্ঞান অবশ্যই তার মধ্যে থাকতে হবে। পড়াশোনাটা এখানে সহায়ক। তাই অনেক বেশি পড়াশোনা করা ও জানার আগ্রহ থাকতে হবে। একজন কম শিক্ষিত ছেলের চিন্তা-ভাবনা ও একজন বেশি শিক্ষিত ছেলের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে দূরত্ব থাকে। মানুষের সঙ্গে ভালো যোগাযোগের যোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে, কারণ এখানে হাজারো মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে হয়। এ ব্যবসায়ে সফলতা পেতে হলে অবশ্যই শিল্প-সংস্কৃতিমনা হতে হবে।
আপনার কাছে সফলতার মূলমন্ত্র কি?
তুহিন বড়ুয়াঃ আমার কাছে সফলতার মূলমন্ত্র হলো তিনটি। কমিটমেন্ট বা ওয়াদা রক্ষা করা, ভালো ব্যবহার ও সততা।
যদি আমি কাউকে একটা কথা দিয়ে থাকি এবং তা রক্ষা করতে না পারি, তাহলে তার কাছে ছোট হয়ে যাবো আর সেও আমাকে বিশ্বাস করবে না। তাই মিডিয়া ব্যবসায় অবশ্যই ভালো ব্যবহার প্রয়োজন। এ ব্যবহারের ফলে ব্যবসায়ের অনেক বাঁধা অতিক্রম করা সম্ভব। আর সততা মানুষকে ওপরে উঠতে সহায়তা করে। আমি মনে করি, প্রতিটি মানুষেরই এ তিনটি গুণ থাকা প্রয়োজন।
সফলতাকে ধরে রাখার জন্য কি পদ্ধতি ব্যবহার করা প্রয়োজন?
তুহিন বড়ুয়াঃ সফলতার মূলমন্ত্র যেগুলো বললাম, এর বাস্তব প্রয়োগ সফলতা ধরে রাখার পদ্ধতি। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেটা আমাদের দেশে চর্চা নেই। আমরা অনেক সময় একে অন্যের সঙ্গে ভালো করে কথাই বলি না। কিন্তু উন্নত বিশ্বের সবাই যার যার স্থানে থেকে ভালো ব্যবহার করে থাকে। অনেক কিছু জেনেই এই ব্যবসায়ে আসা প্রয়োজন। আমি কোনো স্কিপ্ট নিলে অবশ্যই সম্পূর্ণটা পড়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিই যে, নাটকটা ভালো, না খারাপ হবে। এভাবে অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে। ভালো স্কিপ্টই একটা ভালো প্রডাকশন এনে দেয়। যেমন আমার প্রডাকশন থেকে ‘হৃদয়ের কথা’ চলচ্চিত্রটি দর্শকদের মনে সামান্য হলেও দাগ দিয়েছে। আমি মনে করি, এর মূল কারণ ছিল ভালো একটা স্কিপ্ট। আমি এখনো ভালো একটা স্কিপ্টের খোঁজ করছি। ভালো স্কিপ্ট পেলে কালই ছবি নির্মাণে নেমে পড়বো।
আপনার প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
তুহিন বড়ুয়াঃ আমাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হলো, কিছু ভালো নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করা। এর পাশাপাশি সাহিত্যনির্ভর নাটক নির্মাণ করা, একটু বড় আকারের যেমনঃ ভারতে টিপু সুলতান, এ রকম বড় কাজ করা। আমাদের বাংলা সাহিত্যেও অনেক ভালো গল্প রয়েছে। কিন্তু নাট্যরূপ দেয়ার মতো মানুষ কম। এ ধরনের কাজ আমরা আগামীতে করতে পারবো- এ আশা রাখছি
সূত্র: http://careermela.net

0 comments:

Post a Comment

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons