Total Pageviews

Saturday, June 25, 2011

তিন কন্যা এক ছবি


তিন বোন তিন ফুটবলার
ফেনীর একই পরিবারের তিন মেয়ে ফুটবলার। তাদের ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্প শোনাচ্ছেন বদিউজ্জামান

আবদুল মালেক মজুমদারের ছোট মেয়ের নাম বাবু। বাবু আবার মেয়েদের নাম হয় নাকি? প্রশ্নটা করতেই বাবুর উত্তর, ‘সবার ছোট বলে আদর করে সবাই বাবু নামেই ডাকত আমাকে, সেই থেকে আমি বাবু।’ পুরো নাম সৌদিয়া আক্তার বাবু। ফুলগাজী পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী বাবু এবারের জাতীয় মহিলা ফুটবলের আঞ্চলিক পর্বে খেলল ফেনী জেলা দলের হয়ে। সে দলের মূল গোলরক্ষক। আবদুল মালেকের আরও দুই মেয়ে খেলে ফেনী দলে। রাবেয়া আক্তার কাকন স্ট্রাইকার, ফৌজিয়া আক্তার বিন্তু ডিফেন্ডার। 
চূড়ান্ত পর্বে ওঠার জন্য বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে কিশোরগঞ্জের সঙ্গে প্লে-অফ ম্যাচ খেলে ফেনী। কিন্তু টাইব্রেকারে হেরে হতাশ হয়ে বাড়ির পথ ধরতে হয়েছে তিন বোনকে।
আবদুল মালেকের পরিবারটাই ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ। তিন মেয়ের পাশাপাশি ছেলে নুরুল হক পেশাদার ফুটবল লিগের দল ফেনী সকার জুনিয়র দলের গোলরক্ষক। আরেক ছেলে আবদুল্লাহ মজুমদার খেলছে নোয়াখালী লিগে।
আর দশজন অভিভাবক যেখানে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন নিয়ে লেখাপড়া শেখান ছেলেমেয়েদের, সেখানে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কর্মকর্তা আবদুল মালেক শুরু থেকে জোর দেন ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার ওপর। ‘নিজেও ফুটবলার ছিলাম। আশির দশকে খেলেছি ফেনী দলে। আমার মেয়ে বিন্তু সাত বছর ধরে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলে। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ব্যাডমিন্টনে চ্যাম্পিয়ন। অ্যাথলেটিকসেও ভালো। কাকন দুই বছর ধরে জেলা পর্যায়ে খেলে। বড় ভাই আবদুল গোফরান মজুমদার স্বাধীনতার আগে ফুটবল খেলেছেন। যখন দেখি ওরা খেলাধুলায় ভালো করছে, তখন বাধা দিই না।’ বলেন গর্বিত মালেক।
ফুটবলে কত মেয়েই তো আসে, আবার হারিয়েও যায়। বাবু-কাকনরা টিকে থাকতে পারবে? অন্তত স্বপ্ন দেখতে বাধা নেই আবদুল মালেকের, ‘আগেভাগেই ওদের বিয়ে দিতে চাই না।’ শত ব্যস্ততার মধ্যেও মেয়েদের খেলা দেখতে তিনি স্টেডিয়ামে ছুটে যান স্ত্রীকে নিয়ে। কমলাপুরে ফেনীর প্রথম ম্যাচেও সস্ত্রীক দেখা গেছে তাঁকে। 
ফুলগাজী পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী কাকন হতে চেয়েছিল ক্রিকেটার। কাকন জানায়, ‘প্রথমে আমার ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছিল। ব্যাডমিন্টনও খেলতাম। আমাদের স্থানীয় কোচ দীপক স্যার (দীপক চন্দ্র) একদিন আমাকে ফুটবল খেলতে দেখেন। আমার খেলায় মুগ্ধ হয়ে ফুলগাজী মহিলা ফুটবল দল গড়ার সময় আমাকে ডাকেন। প্রথম প্রথম জার্সি পরে, ট্র্যাকসুট পরে প্র্যাকটিসে যেতে দেখলে পাড়ার ছেলেরা হাসাহাসি করত। ঠাট্টা করে বলত, এই মেয়ে খেলোয়াড় হবে! শুনে খুব কষ্ট লাগত। কিন্তু এখন আর কেউ কিছু বলে না।’
ঢাকায় নরসিংদীর বিপক্ষে কাকনের জোড়া গোলেই জিতেছিল ফেনী। দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে কাকনের, ‘এর আগে কখনো ফ্লাডলাইটে খেলিনি। সেদিন তাই খুব ভয় করছিল। একটু নার্ভাসও লাগছিল। এত বড় মাঠ, এর ওপর আবার ফ্লাডলাইটে খেলা।’
ফুলগাজী মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী বিন্তুও ‘অলরাউন্ডার’, ‘ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার—তিনটিতেই পারদর্শী আমি। তবে ফুটবলই বেশি ভালো লাগে। জাতীয় দলে নাম লেখানোর স্বপ্ন আমার।’ সবার ছোট বাবু ভালো গান গাইতে পারে। খেলার জন্য গান ছেড়ে দিয়েছে। 
তিন বোনেরই প্রিয় ফুটবলার লিওনেল মেসি। বাংলাদেশে এলে ঢাকায় স্টেডিয়ামে এসে আর্জেন্টাইন তারকার খেলা দেখবে বলেও জানাল তারা।
ফেনীর কোচ তৌহিদুল ইসলাম এই মেয়েদের মধ্যে দেখছেন দারুণ সম্ভাবনা, ‘ওরা তিন বোনই খুব ভালো খেলে। সঠিক পরিচর্যা পেলে ওরা আরও ভালো ফুটবলার হয়ে উঠবে।’ 
সেই স্বপ্ন নিয়েই কাকন-বিন্তু-বাবুদের এগিয়ে চলা।

Tuesday, June 21, 2011

পলিথিন মিশে যাবে মাটিতে!



এক্সটোডার যন্ত্রে বিকল্প পলিথিন তৈরির কাঁচামাল ঢালছেন এস এম ওয়াহিদুজ্জামান
এমন পলিথিন, যা মিশে যায় মাটির সঙ্গে। পরে এটি পরিবেশবান্ধব ও ধীরগতির সার হিসেবে ব্যবহূত হবে। আর এ পলিথিন তৈরিতে ব্যবহূত হয়েছে পরিচিত সব জিনিস। ক্ষতিকর পলিথিনের মাটিতে মিশ্রণীয় পরিবেশবান্ধব এমনই এক বিকল্প উদ্ভাবন করেছেন অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান। মাটিতে মিশে যায় এমন পলিথিন তৈরির খবর শোনা যায়। তবে মাটিতে মিশ্রণীয় পলিথিন তৈরিতে ওয়াহিদুজ্জামানের পদ্ধতিটি নতুন।ভাতের মাড়, চালের গুঁড়া, আলু, অ্যারারুট প্রভৃতি শ্বেতসার-জাতীয় পদার্থের সঙ্গে পলিভিনাইল অ্যালকোহল (পিভিএ), জিগাগাছের আঠা, ইউরিয়া, চিনি, সয়াবিন তেল মিশিয়ে বিকল্প পলিথিন উদ্ভাবন করেছেন তিনি।
বিকল্প এই পলিথিন ছিল এস এম ওয়াহিদুজ্জামানের পিএইচডি গবেষণার বিষয়। গত ৯ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক বিশেষ সভায় রসায়ন বিভাগের গবেষক এস এম ওয়াহিদুজ্জামানকে তাঁর ‘প্রিপারেশন অ্যান্ড ক্যারেক্টারাইজেশন অব বায়োব্লেন্ড অব ন্যাচারালি অকারিং পলিমারস অ্যান্ড ওয়াটার সুলিউবল পলিমারস টেকনিক’ শিরোনামের অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোবারক আহমদ খানের যুগ্ম তত্ত্বাবধানে তিনি এ গবেষণা সম্পন্ন করেন।
ওয়াহিদুজ্জামান জানালেন, রাসায়নিক পদার্থ ইথিলিনের পলিমার হচ্ছে পলিথিন। এই পলিথিন মাটি ও পানিতে মিশ্রণীয় না হওয়ায় পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তা ছাড়া সম্প্রতি পশ্চিমা বিশ্ব ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়কজাত দ্রব্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে। আমাদের দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে প্যাকেজিংয়ের কাজে ক্ষতিকর পলিথিন ব্যবহার করা হয়। সুবিধাজনক কোনো বিকল্প না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে এ পলিথিন ব্যবহার করছে। তাই সব দিক মিলিয়ে এই ক্ষতিকর পলিথিনের বিকল্প উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
ঠিক এমন সময়ই অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান ভাতের মাড়, চালের গুঁড়া, আলু, অ্যারারুট প্রভৃতি শ্বেতসার-জাতীয় পদার্থের সঙ্গে পলিভিনাইল অ্যালকোহল (পিভিএ), জিগাগাছের আঠা, ইউরিয়া, চিনি, সয়াবিন তেল মিশিয়ে পলিথিনের মতোই এর বিকল্প উদ্ভাবন করেন। গামা রশ্মি বিকিরণের সাহায্যে উৎপন্ন পলিমারকে ক্রস লিংক বা আড়াআড়ি সংযোগ ঘটিয়ে এর গুণগত মান এবং উৎকর্ষ সাধন করা হয়েছে। বাজারে প্রচলিত পলিথিনের মতো এমন একটি পণ্য বানাতে ২০ শতাংশ চালের গুঁড়া, ১০ শতাংশ ইউরিয়া ও ৭০ শতাংশ পিভিএ ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের বিকল্প পলিথিন মাটির মধ্যে ৪২ দিনে ৩০ শতাংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ধীরে ধীরে এটি পুরোপুরি ক্ষয় হয়ে যায়। এটি পানির মধ্যে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। তবে পিভিএর পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর স্থায়িত্ব ও টেকসইয়ের মানও বাড়ানো যায়। এটি সাশ্রয়ী এবং মাটিতে মিশ্রণীয় বলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।
ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বাজারে প্রচলিত পলিথিন পরিবেশের জন্য হুমকি হওয়ায় এর বিকল্প উদ্ভাবনের চেষ্টা চালানোর পর তাঁরা সাফল্য অর্জন করেন। এটি বানাতে প্রাকৃতিক এবং শ্বেতসার বা স্টার্চ-জাতীয় পদার্থের সঙ্গে পলিভিনাইল অ্যালকোহল (পিভিএ) মিশিয়ে পলিথিনের বিকল্প পলিমার-জাতীয় পদার্থ উদ্ভাবন করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেই পলিমারকে এক্সটোডার যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিপূর্ণভাবে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া এর মধ্যে ইউরিয়া থাকায় মাটিতে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে এটি ধীরগতির সার হিসেবেও ব্যবহূত হবে। প্রচলিত পলিথিনের চেয়ে এর দাম একটু বেশি হলেও বাণিজ্যিকভাবে এটি উৎপাদন করা হলে দাম প্রচলিত পলিথিনের সমপর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি জানান।
এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আটটি পাঠ্যপুস্তকের রচয়িতা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকীতে তাঁর চারটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হন। ২০০৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ফেলোশিপ অর্জন করেন।

Wednesday, June 15, 2011

১৪ বছরেই পেশাদার সনদ!


undefined
পিএইচপির পেশাদার প্রোগ্রামার হিসেবে সনদ পেয়েছে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শাহজাদ নূর
ওয়ার্ল্ডওয়াইড ওয়েবের জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম তৈরি করে ওয়েব জগতে নানা কাজের জন্য বর্তমান সময়ে পিএইচপি অন্যতম জনপ্রিয় একটি প্রোগ্রামিং ভাষা। কেতাবি ভাষায় যাকে বলা হয় সার্ভার সাইড স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ। নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য সংযোজনের মাধ্যমে এই ভাষার উন্নয়ন করা হচ্ছে। জেন্ড হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি দক্ষ পিএইচপি ডেভেলপার বা প্রোগ্রামার তৈরির ক্ষেত্রে সহায়তা করে। পিএইচপি ভাষায় যাঁরা দক্ষ প্রকৌশলী তাঁদের সনদপত্র দিয়ে থাকে জেন্ড।

Sunday, June 12, 2011

তুহিন বড়ুয়াঃ বিজ্ঞাপন ফার্ম ও প্রডিউসিংয়ে সফল মানুষ


undefined
ক্যারিয়ার হিসেবে মিডিয়া ব্যবসা কেন বেছে নিলেন?
তুহিন বড়ুয়াঃ আসলে আমার মিডিয়া ব্যবসা শুরু হয় আমার এক বন্ধু কহিনূরের উৎসাহে। সে গ্রম্নপ থিয়েটার করতো। একদিন কহিনূর আমাকে বললো, চল নাটকে বিনিয়োগ করি। মোটামুটি ভালো লাভ হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে কাজে নেমে পড়ি। তখন একুশে টিভি নাটকগুলো কিনে নিতো। প্রথম নাটকের নাম ছিল ‘নষ্টে কষ্টে জীবন’। নাটকটি একুশে টিভিতে প্রচার করা হলো। যদিও নাটকটিতে লাভ না হয়ে ক্ষতি হয়েছিল। তারপরও প্রচার হয়েছিল, এতেই খুশি ছিলাম। এরপরই ‘ঘাটের মানুষ’ নামে আরেকটি খন্ড নাটক করি। তারপর ধারাবাহিক নাটকে বিনিয়োগ করলাম। প্রথম ধারাবাহিক নাটকটির নাম ছিল ‘এবং বিয়ে’। এরপর যখন দেখলাম সবাই আমাকে চিনছে, সবার কাছে পরিচিতি বাড়ছে, তখন ভালোই লাগতো। এভাবেই মিডিয়া ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি।

টার্গেট চেনো, ফোকাস করো, সফল হবে


সফল মানুষরা একসঙ্গে দশটা কাজ করেন— এই ধারণাটা ভুল। এক সময়ে
তাঁরা একটাই কাজ করেন, এবং সেই সময়টার জন্য অন্য সব কাজের কথা
ভুলে যান। পরমুহূর্তেই, এই কাজটা শেষ হয়ে গেলে, মন চলে
যায় অন্য কাজে। আলোচনা করছেন বিবেক দেবরায়
আমি কোনও কাজেই সাফল্য পাই না। ফাঁকিবাজ নই, অন্তত নিজের সাধ্যমত সমস্ত কাজ ভাল ভাবে করার চেষ্টা করি। কিন্তু পড়াশোনা, গান শেখা, বাড়ির কিছু কিছু দরকারি কর্তব্য— এই সব নানা দিক সামলে উঠতে পারছি না। মাঝে মাঝে মনে হয়, সাফল্য ব্যাপারটা সকলের জন্য নয়, যাদের হয় তাদের হয়, ওটা আসলে ভাগ্যের ব্যাপার। সত্যিই কি তা-ই?
জীবনে সাফল্যের নানা মাপকাঠি: যশ, অর্থ, প্রতিপত্তি, আরও কত কী। সাফল্যের সূচক যা-ই হোক না কেন, সফল ব্যক্তির সঙ্গে অসফলের একটা তফাত চোখে পড়ে। অসফল মানুষ সচরাচর পারিপার্শ্বিক বা বাতাবরণকে দোষারোপ করে থাকেন। বাবা-মা যদি একটা ভাল স্কুলে পাঠাতেন! বাবা-মায়ের যদি প্রচুর টাকাপয়সা থাকত, যদি বিদেশে পাঠিয়ে দিতেন পড়তে! যদি আমেরিকায় জন্মাতাম! পারিপার্শ্বিককে যখন বদলানো যাবে না, তখন তাকে দোষ দিয়ে লাভ কী? খুব কম সফল ব্যক্তিকেই বাতাবরণকে দোষ দিতে দেখেছি। বরং পারিপার্শ্বিককে স্বীকার করেই তাঁরা এগিয়ে চলেন। পারিপার্শ্বিকটা আসলে ইতিহাস বা অতীতের মতো। অতীতের একটি প্রতিশব্দ ভূত। সাফল্য বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। ভূতে আটকা পড়ে থাকলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎও হাত থেকে ফসকে যাবে।

শ্রম, মেধা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে যে কোন কাজ করলে সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।

undefined 
শ্রম, মেধা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে যে কোন কাজ করলে সাফল্য অবশ্যম্ভাবী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেশের মুখ উজ্জ্বল করার দৃষ্টান্তও আছে অনেক। সম্প্রতি আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ থেকে গ্র্যান্ট এ্যাওয়ার্ডসহ চার-চারটি এ্যাওয়ার্ড পেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীসহ বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করলেন নর্থ ওয়েস্ট মিসৌরি ইউনিভার্সিটির কেমিস্ট্রি/ ফিজিক্স ফ্যাকাল্টির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রফিক ইসলাম।
তিনি অধ্যাপনার পাশাপাশি নতুন কিছু উদ্ভাবন করার লক্ষ্যে নিজের মেধা ও শ্রমকে গবেষণা কাজে নিয়োজিত করেন। দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যান পলিসিসটিক কিডনি ডিজিস জ্বীন নিয়ন্ত্রণের ওপর। যেহেতু মানব দেহের কিডনি সেলে পলিসটিন নামক এক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়, যা কোন কারণে তৈরি নাহলে কিডনিতে ছোট ছোট টিউমার দেখা দেয় কিংবা কিডনি সেলে খুব বেশি পরিমাণে পলিসটিন তৈরি হলে কিডনি বিকল হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্য্যন্ত ঘটতে পারে। সেজন্য এই জ্বীনটিকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়ে। ড. রফিক ইসলামের কিডনি ডিজিস জ্বীনের নিয়ন্ত্রণের ওপর এ সাফল্য ভবিষ্যতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখবে বলা যায় নিঃসন্দেহে।

বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর বিস্ময়কার আবিষ্কার



undefined
এক বাংলাদেশী বিজ্ঞানীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে তোলপাড়। মূল ধারার বিভিন্ন মিডিয়াতে এখন তাকে নিয়েই আলোচনা-পর্যালোচনা। এ সময়ের প্রত্যাশিত সর্বশেষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন তিনি। এই বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর নাম ড. আনিসুর রহমান। তিনি বর্তমানে পেনসিলভানিয়ার হেরিসবার্গের বাসিন্দা।
বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারপোর্টসহ নিরাপত্তা এলাকাগুলোতে যখন দেহ তল্লাশি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক, তখন তিনি আবিষ্কার করেছেন একটি বিস্ময়কার প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যেকোনো মানুষের শরীরে বিস্ফোরকের যেকোনো উপাদান থাকলে সেটি এমনিতেই ধরা পড়বে। এ জন্য বর্তমানের এক্সরে মেশিনের প্রয়োজন হবে না।

কর্মস্থলের সফলতা নিয়ে কিছু কথা


লেখাপড়া শেষ করে চাকরি নামক সোনার হরিণটি ধরতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। তার চেয়েও বেশি কষ্ট করতে হয় ঠিকঠাকভাবে কর্মস্থলে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা এবং চাকরি টিকিয়ে রাখা। চাকরি জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট ছকের মধ্যে চলতে পারলে জীবন অনেক গোছানো হতে পারে। কর্মস্থলে আসবে সফলতা। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে। কর্মস্থলে দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে এসব ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। এ জন্য সাজ পোশাক থেকে শুরু করে সহযোগীর সঙ্গে মানিয়ে চলা পর্যন্ত কিছু কৌশল আয়ত্ত করা জরুরি। এসব বিষয় নিয়ে রইলো কিছু পরামর্শ

আউটসোর্সিং এ আলফা ডিজিটাল টিমের সফলতা


বর্তমানে ওডেস্ক (www.oDesk.com) মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সররদের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক। ওডেস্কে যে কয়জন ফ্রিল্যান্সার সফলতার সাথে কাজ করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে “আলফা ডিজিটাল” নামক একটি টিম। বর্তমানে এই টিমের সদস্য সংখ্যা ৫০ এর কাছাকাছি। কয়েকমাস আগেও এই গ্রুপটি ওডেস্কের শীর্ষ দশের মধ্যে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছিল। গত বছরের এপ্রিলে গঠিত হয়ে মাত্র এক বছরে তারা এ পর্যন্ত ৩১৮ টি প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছে এবং মোট ১৩ হাজার ঘন্টার উপর কাজ করেছে। এই মূহুর্তে তারা একসাথে ৭৫ টি প্রজেক্টে কাজ করছে। এই টিমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হচ্ছেন মামুনুর রশিদ নামক একজন ফ্রিল্যান্সার। ওডেস্কে এই সফলতা নিয়ে কথা বলেছিলাম তার সাথে। জানিয়েছেন এই সফলতার পেছনের সকল প্রচেষ্টার কথা।

একটা নতুন পরিবেশ –বহু সুযোগ সম্ভাবনা


উচ্চ শিক্ষাকে আপাততঃ এক অচেনা নতুন জগতের  মতো বলে মনে হয় । এ  যেন এক অচিন্তনীয় প্রত্যাহ্বান । আমরা আপনাদের  আমন্ত্রণজানাচ্ছি—এর  (উচ্চশিক্ষা) থেকে কী করে সবচে’ বেশি আদায় করে নিতে  পারি তাই নিয়ে ভাববার জন্যে কিছুটা সময় ব্যয় করুন। এই অনুশীলনটি মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে অধ্যয়নের নতুন বিষয় যারা  অনুসন্ধান করছে তাদেরই  কথা মনে রেখে  সাজানো হয়েছে । স্কুল পর্যায়েযদি এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে , তবে  প্রথম বার্ষিক প্রারম্ভিকাতেই ( Orientation) এর কিছু উত্তর পাওয়া যাবে। এই অনুশীলনীটিব্যবহার করে মনে একটা  ‘বৃহৎ চিত্র’ কল্পনা করে নিয়ে  তার মধ্যি দিয়ে  হাতে-কলমে কাজ শুরু করো । তৈরি? আমরা ক’টি  মৌলিক প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি এসো   ।

কোনো কিছু শেখার সবচে’ কাজের পথটাই হলো নিজেকে জানা


  • শেখার জন্যে তোমার সামর্থ্য ।
  • অতীতে যে পদ্ধতিগুলো তুমি সফলতার সঙ্গে ব্যবহার করেছো ।
  • যে বিষয়টি তুমি শিখতে চাইছো তার সম্পর্কে তোমার আগ্রহ এবং জ্ঞান ।
  • তোমার কাছে পদার্থবিজ্ঞান শেখাটা সহজ হতে পারে, কিন্তু টেনিস শেখাটা বড়ই কঠিন । এর উল্টোটাও সত্যি । শিক্ষা মাত্রেই একটা পদ্ধতি যা কিনা একাধিক ধাপ পেরিয়ে পুরো হয় । শেখার চারটা ধাপ হলোঃ এ পৃষ্ঠাটি ছেপে বের করো আর প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও । তাতে যে উত্তরগুলো পাবে তাই দিয়েই এবং অন্যান্য অধ্যয়ন নির্দেশিকার ( Study Guide) সাহায্য নিয়ে তোমার পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলো ।

সময়ের ব্যবস্থাপনা


সময়ের ব্যবস্থাপনার  কৌশলগুলোর  বিকাশ হলো গে’ একটা যাত্রা। এই যাত্রা আমাদের এই  নির্দেশিকার সঙ্গে  আরম্ভ হতে পারে । কিন্তু যাত্রাপথে দরকার পড়বে  অনুশীলন এবং আরো  কিছু পথ নির্দেশিকার ।
এই আলোচনার একটা লক্ষ্য হলো—কী করে সময়ের  ব্যবহার করতে হয়  সে সম্পর্কে তোমাকে আত্মসচেতন হতে সাহায্য করা । তোমারবন্ধুবান্ধব, পরিবার এবং কাজকর্মের প্রেক্ষাপটে  এই লক্ষ্য তোমার  লেখাপড়ার কাজটিকে অনেক  সংহত, অগ্রাধিকার প্রদান এবং সফল হবার জন্যে একটা সহায়ক হিসেবে কাজ করে ।
প্রথমত ঃ তুমি  আমাদের  সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত  অনুশীলনীটি দিয়ে  আরম্ভ করো।
প্রতিদিন তুমি তোমার   সময় কীকরে ব্যয় করো ?

যোগাযোগে সফলতা

প্রতিদিন চারপাশের মানুষের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। যিনি যত ভালোভাবে এটি করতে পারেন, তাঁর কাজ করা তত সহজে হয় এবং এর ওপর নির্ভর করে তিনি সফলতার মুখও দেখতে পারেন। যখন একজন মানুষ কার্যকরভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন, তখন তাঁর সাফল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকে।এভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা যখন নিজেদের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়িয়ে নেন, তখন সেই প্রতিষ্ঠানটিরও উন্নতি হতে থাকে দ্রুতগতিতে। তাই ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে যোগাযোগের দক্ষতা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যোগাযোগের মধ্যে রয়েছে কিছু কার্যকর আর কিছু অকার্যকর যোগাযোগ। আমাদের সব সময় কার্যকর যোগাযোগ বাড়াতে হবে।যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আছেবেশ কিছু কৌশল, যেসবের সঠিক প্রয়োগে সহজে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায় কীভাবে? এর কৌশল কী কী?

সফল নারী হয়ে ওঠার গল্প


undefined
পিছিয়ে থাকার সময় অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তাইতো আমাদের নারীরা আজ সাফল্যের পতাকা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে অনেক শ্রমের গল্প। বিশ্ব নারী দিবসকে সামনে রেখে আমাদের শোবিজ জগতের খ্যাতিমান কয়েকজন নারীর সফল হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে এবারের মূল ফিচার লিখেছেন রকিব হোসেন।
নারী শব্দটি উচ্চারণ করতেই আমরা সবাই নাড়ির টান অনুভব করি। নারী মানে একজন মা, কন্যা, বোন আরো অনেক সম্পর্কের বন্ধন। আর এই সম্পর্কের মাঝে আছে অনেক মধুরতা, আবেগের মাখামাখি আরো আছে আনন্দ, সুখের অনেক কাব্য। এক সময় নারী অভিধানে অবহেলিত, অসহায়ত্ব এই শব্দগুলো খুব মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেও এখন আর সেখানে এই শব্দগুলো খুব দুর্বল চেহারা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের নারীরাও নিজেদের সাফল্যের গল্প রচনা করেছেন অনেক বন্ধুর পথ অতিক্রম করে। তেমনি আমাদের শোবিজ জগতের নারীদের সাফল্য গাঁথাও চোখে পড়ে বড় করে। এই জগতের বাসিন্দাদের অনেকেই আজ নিজের কর্ম দিয়ে নতুন প্রজন্মের মাঝে আদর্শ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের মিডিয়ায় আলোচিত নারীদের মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় খ্যাতিমান চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও পরিচালক কবরী’র কথা। বরেণ্য পরিচালক সুভাষ দত্তের হাত ধরে ১৯৬৪ সালে চলচ্চিত্রে আসেন মিষ্টি মেয়ে কবরী। প্রথম ছবি ‘সুতরাংম্বএ তার অভিনয় দর্শক মনে আলোড়ন তোলে। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুধু সাফল্যের সঙ্গে সামনে এগিয়েছেন তিনি। এক সময় নায়ক রাজ-রাজ্জাকের সঙ্গে জুটি হয়ে কাজ করে তিনি তৈরি করেছেন সাফল্যের নতুন এক ইতিহাস। শতাধিক ছবিতে অভিনয় করে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- ময়নামতি, বধূ বিদায়, কখগঘঙ, অধিকার, সারেং বৌ, দ্বীপ নেভে নাই, আবির্ভাব, দুই জীবন, অনির্বাণ, স্মৃতিটুকু থাক, সুজন সখি। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র আয়না একটি বিশেষ শ্রেণীর দর্শকদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। চলচ্চিত্র এবং টিভি নাটক দুই মাধ্যমেই তিনি কাজ করছেন সাফল্যের সাথে। অবশেষে জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাফল্যকে মুঠোবন্দী করেছেন তিনি।

আমরা সত্যিই মানবকল্যাণে এমন একটি কাজ করছি, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী


undefined
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সালমানের ‘খান একাডেমি’ পেয়েছে ‘গুগুল’-এর ২০ লাখ ডলার মূল্যমানের পুরস্কার। এক লাখ চুয়ান্ন হাজার প্রকল্পের মধ্য থেকে শিক্ষা বিভাগে সেরা নির্বাচিত হয়েছে খান একাডেমির বিনা মূল্যে শিক্ষামূলক অনলাইন ভিডিও টিউটরিয়াল। এই অর্জনের খবর পেয়ে আমরা ‘স্বপ্ন নিয়ে’র পক্ষ থেকে সালমানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ৩ অক্টোবর সালমান ই-মেইলে জানান তাঁর স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা।
২০ লাখ ডলারের পুরস্কার পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। খান একাডেমি এত দিন স্বল্প পুঁজি নিয়ে কাজ করছিল, এই পুরস্কার আমাদের সামনের ধাপে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। এত এত যোগ্য ও ভালো প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে খান একাডেমিকে বেছে নেওয়ার কারণ হচ্ছে, আমরা সত্যিই মানবকল্যাণে এমন একটি কাজ করছি, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এক মাসে আমাদের পোর্টালে পাঁচ লাখ ব্যবহারকারী নিবন্ধন করেছে এবং এখানে প্রায় দুই কোটি ৪০ লাখ বার ভিডিও দেখা হয়েছে, যার পেছনে মোটামুটি আমার নিজের শ্রম ছাড়া তেমন কোনো ব্যয়ও হয়নি। এখন আমরা কিছু পেশাদার প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে পারব, তখন বিশ্বের শীর্ষ ভাষাগুলোয় এ তথ্য অনুবাদ করা সম্ভব হবে।

স্বপ্নচূড়ায় সালমান


undefined
ছোট্ট একটা ঘর। দেয়ালগুলো ছাওয়া হালকা সবুজ রঙে। বইপত্রে ঠাসা পুরো জায়গাটা। একটা টেবিল, কাঠের গদিওয়ালা চেয়ার, প্রিন্টার আর কম্পিউটার—ঘরের আসবাব বলতে এগুলোই। এখানেই দিনমান কাজ করে যান টগবগে যুবক সালমান খান। অনেক দায়িত্ব তাঁর। বুক ভরা অনেক অনেক স্বপ্ন। প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য নির্ভর করে তাঁর ওপর। সংখ্যাটা কোটিতে নিয়ে যেতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। লাখো অভিভাবকের আশীর্বাদ আছে সঙ্গে। কাজে গাফিলতি করার উপায় নেই তাই একদমই। ভোর হলেই জানালার কাচ ভেদ করে হুড়মুড়িয়ে আলো ঢোকে তাঁর ঘরে। ঘুমে ঢুলুঢুলু। সামান্য কিছু মুখে দিয়েই নিজের চেয়ারটাতে বসে যান তখন সালমান। মনিটরে চোখ রেখে ভাবতে থাকেন শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো নিয়ে। একটানা চলে কাজ। গণিত ও বিজ্ঞানের সমস্যা সমাধানের জন্য ইউটিউবে এক হাজার ৬৩০টি ভিডিও দিয়েছেন সালমান। প্রতিদিন কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থীরা প্রায় সত্তর হাজারবার সাহায্য নেয় এ ভিডিওগুলো থেকে। আনন্দদায়ক এক পদ্ধতিতে গণিত ও বিজ্ঞানের নিরস বিষয়গুলো আয়ত্ত করে নেয় সবাই। অল্প সময়ের ভেতর এত শিক্ষার্থীকে সহজ পদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে পেরে আনন্দে ভরে যায় মন। সালমানের আনন্দে খুশি হন তাঁর স্ত্রী উমাইয়া মারভিও। চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় স্বামীর ওপর যে অভিমানটা ছিল এত দিন, উবে যায় তা নিমেষেই।

তিন তরুণের স্বপ্ন-উদ্যোগ


undefined
তাঁদের মাথায় ঘুরতে থাকে ‘আইডিয়া’। একটি ভাবনা নিয়ে তিনজন মগ্ন থাকে দিনের পর দিন। সেই ভাবনাই এনে দেয় পুরস্কার। বদলে দেয় তাঁদের জীবন। বলছি সাবাবা ইসলাম, সিফাত সারোয়ার ও সাজ্জাদুর রহমানের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী তাঁরা তিনজন।
‘এখন আমরা তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। এর আগে দুই বছর তরুণ উদ্যোক্তা পুরস্কারে শুধু বড়দের অংশগ্রহণ দেখতে গিয়েছি। এবার ভাবলাম নিজেরাই করি। দেখি পারি কি না। নানা আইডিয়া মাথায় ঘুরতে লাগল। একই ক্লাসের হওয়ায় আমরা একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করতাম। তবে এ প্রকল্পের চিন্তাটা প্রথম আসে সাজ্জাদের মাথায়। কৃষিভিত্তিক এমন কিছু, যা পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু কীভাবে করব বুঝতে পারছিলাম না। এরপর এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করি। ইন্টারনেটে নানা তথ্য পাই। এগিয়ে যেতে থাকে কাজ।’ শুরুর কথা এভাবেই বলেন সাবাবা।
‘এইচএসবিসি তরুণ উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০০৯-১০’ বাংলাদেশ পর্ব জয় করার পথে তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথাও শোনা গেল। চূড়ান্ত পর্বে যখন জানা গেল, ওঁরাই সেরা, তখন অদ্ভূত এক আনন্দে ভরে গেল ওদের মন। গত পাঁচ মাস এই তিনজন ছিলেন যেন ঘোরের মধ্যে। সেই ঘোর এখনো কাটেনি। তাঁরা তাঁদের স্বপ্নকে নিয়ে গেছেন এক ধাপ এগিয়ে। এই তরুণেরা প্রমাণ করতে পেরেছেন নিজেদের। পরিচিত করেছেন উদ্যোক্তা হিসেবে।
এখন তাঁরা কেমন আছেন, তা জানা যাক। সকালে পরীক্ষা। মাঝে খানিকটা বিরতি। দুপুরে ফের পরীক্ষা। এরই ফাঁকে কথা হয় ওদের সঙ্গে। ‘কাজের জন্য পড়ার বেশ ব্যাঘাত হয়েছে। এখন তা পুষিয়ে দিতে হচ্ছে।’ জানালেন ওরা। এভাবেই নিজেদের কথা শুরু করেন। জানান গত পাঁচ মাসের ঘোরলাগা দিনের গল্প। সেই ঘোর এখনো কাটেনি তাঁদের। একটি পুরস্কার বদলে দিয়েছে জীবন।
‘কী কাজ করেছেন আপনারা। কোন কাজ এনে দিল এত বড় একটি পুরস্কার?

সময়টা আনন্দে কাটাও


undefined
তোমরা তো অনেক দিন খুব কঠিনভাবে পড়াশোনা করেছ। পরীক্ষার শেষে ফল বেরিয়েছে। এখন মুক্তির নিঃশ্বাস। এখন মনের আনন্দ নিয়ে তোমরা করে যাও, যা তোমাদের খুশি। আজকাল পড়াশোনা সত্যি সত্যি খুব কঠিন হয়ে গেছে। শিশুদের ওপর পড়াশোনার অমানবিক চাপ যেটা দেওয়া হয়, সেটার সঙ্গে আমি একেবারেই একমত নই। কোনো উন্নত দেশে শিশুদের ওপর পড়ালেখার এত চাপ দেওয়া হয় না। তাদের ওপর স্কুলের চাপ, পরিবারের চাপ এত বেশি যে আজকাল কিশোর-কিশোরীরা তাদের শৈশবটাকে প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। আনন্দের, স্বপ্নের, অবকাশের মুহূর্তগুলো তাদের হাত এড়িয়ে পালিয়ে যায়।
আমরা তো এই সময়টা দারুণভাবে উপভোগ করতাম। তোমরাও করো। এই সময়ে তোমরা ঘুরবে। খেলবে। প্রাণভরে জীবনের আনন্দ লুটে নেবে। অভিভাবকদের বলব, তাঁরা যেন সন্তানদের বেড়ানোর সুযোগ করে দেন। ঘরের বাইরে বেরোলে, অবকাশ পেলে সবার মধ্যে নতুন নতুন আইডিয়া আসে। সেই অবকাশ তোমাদের চাই। এখন তোমরা সময় পেয়েছ। এই সময়টাকে যতটা বেশি পারো, অবকাশ ও আনন্দের জিনিস দিয়ে ভরে ফেলো। তোমাদের যা নিয়ে আনন্দ করার ইচ্ছে করে, তাই করো। তবে তা যেন ভালো আনন্দ হয়, স্বাস্থ্যকর আনন্দ হয়, মনের বিকাশের অনুকূল হয়।

মুসা তার স্বপ্ন পূরণ করেছে


undefined
২০০৬ সালের শুরু তখন। মুসা ইব্রাহীম সবেমাত্র নেপালের একটি পর্বতারোহণ করে এসেছে। তখন তার সঙ্গে আমার টুকটাক কথাবার্তা হয়। একদিন পর্বতে ওঠার নানারকম ছবি দেখাল। ছবি দেখতে দেখতে কথা হচ্ছিল। তখনই দেখেছি ওর অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে পাহাড় আর এভারেস্ট।
ওর স্বপ্ন ছিল এভারেস্ট জয় করার। নিজের স্বপ্ন সে পূরণ করবেই। ফেসবুকে ও লিখেছে, ‘আমি যদি লক্ষ্য স্থির করি যে কিছু একটা করব, মনে রেখো, আমি সেটা যেকোনো উপায়েই করে ছাড়ব।’ ফেসবুকে নিজের সম্পর্কে যা বলেছে, ও তো তাই-ই। পাহাড়ের টানেই পেশাজীবনকেও সে দূরে সরিয়ে রেখেছে। এমন কোনো পেশায় জড়ায়নি, যাতে ওর পাহাড়ে যেতে অসুবিধা হয়।
নর্থ আলপাইন ক্লাব গঠন করল। ঘোষণা দিল ‘ভিশন ২০১০: মিশন এভারেস্ট’। অন্নপূর্ণা-৪ জয়ের পর ওর আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেল। এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রবলভাবে শুরু হলো এভারেস্টে যাওয়ার প্রস্তুতি। মার্চের শেষের দিকে একবার ঢাকায় গিয়ে দেখলাম, মুসার মুখ একেবারে কালো। টাকার সংস্থান হচ্ছে না। যাওয়া হবে কি না, তা অনিশ্চিত। ময়মনসিংহ ফিরে আসার পর ৪ এপ্রিল ও জানাল, ‘চলে আসো। বৃহস্পতিবার যাচ্ছি।’

একটা সাগর কীভাবে হারিয়ে ফেললাম!


undefined
দলপতির আশকারা পেয়েই দলছুট হওয়ার সাহসটা পেয়েছিলাম; বুঝতে পারিনি যে পরিণতি মোটেই সুখকর হবে না। এখন উপকূলটা কোন দিকে, সেটাই আমি ঠাহর করতে পারছি নে। দল ছেড়ে দক্ষিণমুখো হওয়ার সময় মনে হয়েছিল, ম্যাকারনির বাসা দেখে ফিরতি পথে এই ছোট পাহাড়টা ডিঙিয়ে গেলেই উপকূলের নাগাল পাব, তারপর সৈকত ধরে আধাঘণ্টা জোর-কদম হাঁটলে মূল দলকে ধরে ফেলতে পারব। ম্যাকারনির ছবি তুলে বাঁয়ের পাহাড় ছাড়িয়ে আরও দুটো পাহাড় পার হয়েছি; এখন দেখি চারদিকে বরফঢাকা পাহাড় আর পাহাড়, সৈকতের কোনো চিহ্ন নেই। ম্যাকারনির খোঁজে ‘ব্রাউন ব্লাফ’ উপকূল থেকে দক্ষিণে বড়জোর এক কিলোমিটার দূরে গেছি; এখন ফিরতি পথে প্রায় এক ঘণ্টা চলার পর পানি তো নজরে আসেই নি, ঢেউয়ের শব্দও কানে আসছে না। দলছুট হয়ে দেড় ঘণ্টার মধ্যে একটা আস্ত সাগর আমি কীভাবে হারিয়ে ফেললাম বুঝি নে!
ঘণ্টা দুই আগে আমরা একটা সাদামাটা হিমবাহের শিখরে উঠেছিলাম; সবাই আগ্রহ নিয়ে আজ ট্র্যাকিংয়ে এসেছে হিমবাহ পার হয়ে একটা ফিয়র্ড দেখা আর ১০ হাজার জেন্টু পেঙ্গুইনের বিশাল এক কলোনির ছবি তোলার জন্য। হিমবাহ থেকে নেমে সবাই বাঁয়ে মোড় নিয়ে ফিয়র্ড দেখতে যাবে, তারপর সৈকত ধরে ট্র্যাকিং করবে জাহাজের দেখা না পাওয়া পর্যন্ত। হিমবাহ থেকে নেমে আর সবার মতো উত্তরমুখো না হয়ে দক্ষিণে এগিয়ে গেলে ১৫ মিনিট পর একডজন ম্যাকারনি পেঙ্গুইনের একটা খুদে কলোনি দেখা সম্ভব—এই সংবাদটা গোপনে আমাকে দিয়েছিল ল্যারি হব্স। ল্যারি আমাদের

‘আর এগিয়েছ কি মরেছ’


undefined
‘এই, হ্যালো, পিছে হটো, পিছে হটো, আর এগিয়েছ কি মরেছ।’ সাহেবি ভদ্রতার ধার না ধেরে অভিযাত্রীদের কানে তালা লাগিয়ে চিৎকার করে দলপতি বলল, ‘শিগগির পিছে আসো, পিছে চলে আসো, ওভার-হ্যাং ভেঙে পড়বে।’ আমার উদ্দেশেই এত সব চেঁচামেচি, আমিই ফালমারের ফটো তোলার জন্য দলছুট হয়ে হিমবাহের প্রান্তে চলে এসেছি। আর সব অভিযাত্রী লাঞ্চ-প্যাকেট নিয়ে দলপতির পাশে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে আছেন। সকালে লঙ্গিয়ার্বেনের উষ্ণ আস্তানা ছেড়ে অন্তহীন হিমবাহে নেমে টানা চার ঘণ্টা আইস-স্কুটার হাঁকিয়ে সবাই ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত, স্তিমিত; ইতিউতি তাকানোর উৎসাহ নেই কারও, শুধু এই রাইফেলধারী হামবড়া দলপতিটা ছাড়া।
আমারও উৎসাহ ছিল না হিমবাহের কার্নিশে ঝুল-বারান্দার মতো লটকে থাকা জমাট বরফের ওভার-হ্যাং কত ভর নিতে পারে, তা পরখ করার। চার ঘণ্টা আইস-স্কুটারের ক্লাচ ধরে রাখার পর লাঞ্চের ঠোঙা ছেঁড়ার জোরটুকুও ছিল না আঙুলে। আমরা বারেন্টস আর গ্রিনল্যান্ড সাগরের উত্তরে চির-শুভ্র দ্বীপপুঞ্জ সভালবার্ডের হিমবাহ পার হচ্ছি। এপ্রিলের ১১ তারিখ, এখন এখানে ২৪ ঘণ্টা দিনের আলো। বরফ-ঢাকা চড়াই-উতরাই পার হওয়ার জন্য আইস-স্কুটার অসাধারণ এক বাহন; কিন্তু মুশকিল হলো, সারাক্ষণ এর ক্লাচ চেপে ধরে রাখতে হয়, ক্লাচ ছাড়লেই চলা বন্ধ। যাত্রী পড়ে গেলে তৎক্ষণাৎ স্কুটার নিশ্চল করার জন্যই এ ব্যবস্থা। ক্লাচ ধরার সহজ কাজটুকু এ মহা হিমের জগতে যে কী এক জ্বালাতন, তা দুই হাতের শীতল ও অচল পেশিগুলো প্রতি মুহূর্তে জানান দিচ্ছিল। তাই একটু শ্যাডো-বক্সিং করে জমাট পেশি সচল করার মতলবে দল থেকে সরে হিমবাহের কার্নিশের দিকে হাঁটা দিয়েছিলাম।

Saturday, June 11, 2011

‘মুসাআআআ! রোপ ধরে ওঠো’


undefined
স্বপ্ন নিয়ে পাতায় এভারেস্ট বিজয়ের কাহিনি ধারাবাহিকভাবে লিখছেন মুসা ইব্রাহীম। আসুন তাঁর কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাক এই দুঃসাহসিক অভিযানের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।
‘প্রথম বা দ্বিতীয় বলে কোনো কথা এখানে নেই। এটা এভারেস্ট। এতে আরোহণ করতে হয় ধীরে ধীরে এবং নিজের গতিতে।’ ২৩ জুন দিবাগত রাত ১২টার পর যখন আকাশে চাঁদ ঝলমলিয়ে উঠল, সেই প্রায় সাড়ে আট হাজার মিটার উচ্চতায় তেনজিং নোরগের এ কথা মনে পড়ছিল বারবার। বাংলাদেশ থেকে এভারেস্টে অভিযান পরিচালনা করতে হবে, দেশের লাল-সবুজ পতাকা এভারেস্টের চূড়ায় ওড়াতে হবে—ক্লাবের সেই অভিযানের সহযোদ্ধাদের কথা ভাবছিলাম। রিমি-রাইদের কথাও ঝিলিক দিয়ে মনে উদয় হচ্ছিল। ক্ষুদ্র পরিসরটা নিজের, কিন্তু এর সার্বিক অর্জন তো দেশের। দেশের জন্যই তো এ অভিযান। আরেকটা নতুন অভ্যুদয়। আরেকটা নতুন সূচনা এবং নিজের ক্ষেত্রে তা পুনর্জন্মের প্রসবপর্ব। সবই ছিল অনুপ্রেরণার বিষয়বস্তু। সুতরাং ২০১০ সালে এভারেস্ট অভিযানে যাত্রাটা সবার জন্য ছিল অবশ্যম্ভাবী। এক ধরনের প্রতিযোগিতাও। তবে তেনজিং নোরগে মননে, আরোহণে সঙ্গেই ছিলেন প্রেরণাদাতা হিসেবে। এভারেস্টের বেস ক্যাম্প ও অ্যাডভান্স বেস ক্যাম্পে তার ম্যান অব এভারেস্ট: অটোবায়োগ্রাফি অব তেনজিং নোরগে বইটি পড়ে এভাবেই শিহরিত হয়েছিলাম বারবার। আর ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে যে অভিযান শুরু হয়েছিল, ২৩ জুন ছিল সেই অভিযানের ৪৬তম দিন। বেস ক্যাম্পে পৌঁছানোর হিসাবে (১৪ এপ্রিল) তা ছিল ৪০তম দিন এবং প্রতিটি দিন ছিল নতুন করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার দিন। ‘আমিও পারি’ কথাটি প্রমাণ করার দিন।

এভারেস্ট জয়ের সেই সকালটি


undefined
স্বপ্ন নিয়ে পাতায় এভারেস্ট বিজয়ের কাহিনি ধারাবাহিকভাবে লিখছেন মুসা ইব্রাহীম। আসুন, তাঁর কাছ
থেকে জেনে নেওয়া যাক এই দুঃসাহসিক অভিযানের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।
কৈলাসের কথা শুনে গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠছে। সেই রক ফেসের ডান দিয়ে সরু একটা খাঁজ। তার ওপর ক্র্যাম্পন ঠেকিয়ে কোনোমতে পার হচ্ছি। এ পর্যায়ে এভারেস্টজয়ী ফিরতি দলের সঙ্গে একের পর এক সাক্ষাৎ হচ্ছে। তাদের যে অভিনন্দন জানাব, মনের সেই অবস্থাও নেই। সেই রাত আটটায় শুরু হয়েছিল ক্লাইম্বিং, এখন প্রায় ভোর। এর মধ্যে কোনো খাওয়া-দাওয়া নেই, পানিও খাওয়া হয়নি। তার পরও শরীরের শক্তির শেষবিন্দু ঠেলে দিচ্ছি পাহাড়ে ওঠার দিকে। মনের তাড়না ও জেদের প্রায় পুরো অংশ ব্যয় করছি। শুধুই ভাবছি—বিশ্বের কোনো একজন মানুষ এ কাজ পারলে তা আমিও পারব। এই ভেবে নিজেকে চাঙা রাখছি।
শেষ দিকে প্রায় ৬০ ডিগ্রি খাড়া একটা ঢাল পেরোতেই চোখে পড়ল এভারেস্টের চূড়া। আমি আনন্দে আত্মহারা। সেটা মনের মধ্যে চেপে ধরে এগোতে শুরু করলাম।
এবার হেডল্যাম্প পুরোপুরি বেঁকে বসেছে। কোনো আলোই বেরোচ্ছে না হেডল্যাম্প থেকে। ভাবলাম—তাহলে এগোচ্ছি কী করে? পূর্ব দিগন্তে চোখ ফেরাতেই দেখি আকাশ ফরসা হয়ে আসছে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। সেই আলোতেই যতটুকু পথ দেখা যায়, মনের অজান্তে তাকেই ভরসা ধরে নিচ্ছি। যাক, বাঁচা গেল তাহলে, নামার সময় তাহলে আর সমস্যা হবে না—মনে মনে ভাবছি।
আর মাত্র ৫০ মিটার ঢাল। পুরোটাই বরফ। দেখলাম, চূড়ার কাছে আরোহীদের লম্বা সারি। সামিট লাইন। সেই ঢাল পার হচ্ছি। আর মনে হচ্ছে যেন স্বপ্নের দিকে এগোচ্ছি। পাঁচ মিনিট, ছয়—সাত—আট—নয় মিনিটের মাথায় গিয়ে পৌঁছালাম এভারেস্টের চূড়ায়। লক্ষ্য পূরণ হলো। চিৎকার করতে ইচ্ছে হচ্ছে। চিৎকার করে বলতে মন চাইছে, ‘আআআমিইই পেরেছিইইই। বিশ্বের দম্ভ, সর্বোচ্চ চূড়া এখন বাংলাদেশের পায়ের নিচে। এক বাংলাদেশির কাছে এভারেস্ট হার মেনেছে।’ সাফল্য লাভের পর আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাঁর কাছে এও প্রার্থনা করছি, যেন নিরাপদে নামতে পারি।

‘এভারেস্টের চূড়া দেখতে পাবে’


undefinedস্বপ্ন নিয়ে পাতায় এভারেস্ট বিজয়ের কাহিনি ধারাবাহিকভাবে লিখছেন মুসা ইব্রাহীম। আসুন, তাঁর কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাক এই দুঃসাহসিক অভিযানের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।
প্রথম পর্বের পর
কৈলাসের কথা শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেল। কান গরম হয়ে উঠল। আবারও জেদ চেপে গেল। দাঁতে দাঁত কামড়ে আগুন চোখে কৈলাসের দিকে তাকালাম। এরপর ঘাড় ফেরালাম আরও ডানে। এবার চার-পাঁচটা পুরোনো রোপ দৃষ্টিসীমায় এল। সেটা কিছুটা ডানে সরে গিয়ে পাকড়ালাম এবং আগের মতো বাঁ হাতে জুমার ঠেলে এবং ডান হাতে রোপ আঁকড়ে ধরে সেই ওভারহ্যাং ট্র্যাভার্স করতে শুরু করলাম।
বিধি বাম। ২০ সেকেন্ডের চেষ্টায় সেই ওভারহ্যাং পাশ কাটালাম ঠিকই। পিঠে ব্যাগপ্যাকের ভেতর অক্সিজেন বোতল রেখে রেগুলেটরটা বাইরে রেখেছিলাম, যাতে সহজেই বোতলে অক্সিজেনের পরিমাণ এবং অক্সিজেন প্রবাহ পরীক্ষা করা যায়। সেই রেগুলেটরের সঙ্গে যুক্ত রাবার পাইপ, যা বোতল থেকে অক্সিজেন মাস্কে অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যায়—ঠিক ওপরের দিকে ফুটো হয়ে গেল ওভারহ্যাং রক ফেসে ঘষা খেয়ে। শশশশশশ। একটানা শব্দ হচ্ছে। অক্সিজেন বের হয়ে যাচ্ছে ফুটো পাইপ দিয়ে, ফুসফুসে যাচ্ছে শুধু সাধারণ বাতাস। যাতে অক্সিজেনের পরিমাণ মাত্র ৩৩ শতাংশ।
এতক্ষণ জীবন বাজি রেখে সেই ওভারহ্যাং পার হয়ে এলাম ঠিকই। কিন্তু বুক দ্বিগুণ বেগে হাপরের মতো ওঠানামা করছে। আর পাইপ ফুটো হয়ে যাওয়ায় সেই হাপর মনে হলো এখনি ফেটে যাবে—ভেতরে বাতাস নেই ঠিকই, কিন্তু বাইরের বাতাসের চাপে। বাতাস নাক-মুখ দিয়ে ফুসফুসে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পর্যাপ্ত অক্সিজেন না থাকায় মনে হলো মরে যাচ্ছি। সেই রক ফেসের ওপর দুই হাত ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মাস্কের ভেতর মুখ হাঁ করে অক্সিজেন পাওয়ার চেষ্টা করছি। পারছি না, পারছি না। মরে যাচ্ছি, আর মনে হয় হলো না।

রক্তাক্ত হাসকি কোলে নিয়ে স্লেজে ফিরে গেলাম


undefined
‘হাসকিদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ো, এর মুখ থেকে ওকে ছাড়িয়ে নাও, রক্ত দেখে ভয় পেয়ো না, হাত লাগাও, হার্নেস ধরে টান মারো, একে সরাও, ধরো ওটাকে।’ দলনেতা রবার্ট উন্মত্ত কুকুরের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে করতে পাগলের মতো চিৎকার করে আমার উদ্দেশে এসব কথা বলল। আমাদের দুই স্লেজের কুকুর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ১২টি হাসকির গর্জনে কানে তালা লাগছে, মুলার মতো দাঁত ঢুকে যাচ্ছে কারও পেটে-পিঠে। পায়ের তলায় হিমবাহের সাদা জমি কুকুরের রক্তে লাল। রবার্ট যতই চেঁচাক, এক ডজন সংগ্রামী হাসকির মাঝে সশরীরে দাঁড়ানো কি সোজা কথা! কিন্তু আমারই ‘পদস্খলনে’ শুরু হয়েছে এ হাসকি-লড়াই, এখন খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে তো থাকতে পারি না। বিকশিত দাঁতের বীভৎস সারি অগ্রাহ্য করে ভূলুণ্ঠিত একটা হাসকিকে টেনে সরালাম। অমনি তার ক্ষিপ্ত প্রতিপক্ষ ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর। তার ভারে আমি ধরাশায়ী হলাম। চরকির মতো চার হাত-পা চালিয়ে রবার্ট দুই দল হাসকির মধ্যে কোনোমতে এক যুদ্ধবিরতি রেখা কায়েম করল। সেই নো-ডগ্স-ল্যান্ডে আমি রক্তাক্ত হাসকি কোলে নিয়ে বসে রইলাম।

আমার মাথায় চাটি মেরে দৈত্যটা উড়ে গেল….ইনাম আল হক


‘দৈত্য, দৈত্য—পেট্রেল আসছে, মাথায় ঘা মারবে, বসে পড়ো বোকারাম, বসে পড়ো।’ চিৎকার করে এসব নির্দেশ দিতে দিতে ব্রেন্ট হিউস্টন হঠাৎ বসে পড়ে উত্তর দিকে সেজদা দিল। নির্দেশগুলো আমার উদ্দেশেই ছিল, কিন্তু আমার মাথায় তখন কি আর কিছু ঢোকে! দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা শেষে সদ্য অ্যান্টার্কটিকায় পা ফেলেছি, তারপর ‘প্যারাডাইস বে’ বা স্বর্গোপকূলের পাথুরে দেয়ালে আরোহণ করে একেবারে ঘোরের মধ্যে আছি। সমুদ্রের গর্জন কমে এসেছে, সৈকতে আমাদের সহযাত্রীদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শত শত ‘অ্যাডেলি পেঙ্গুইন’। আজ শীতের তীব্রতা কমেছে, তাপমাত্রা বেড়ে শূন্য ডিগ্রিতে এসেছে, সারাক্ষণ ঝুরঝুর করে তুষার ঝরছে। পাহাড়ের ওপর ওড়াউড়ি করছে দক্ষিণ মহাসাগরের বিরল পাখি, দৈত্য-পেট্রেল ও খয়রা-স্কুয়া। কাছে গিয়ে এদের দেখার জন্য আমরা দুই পাখিপ্রেমী পাহাড়ে উঠেছি। আরোহণের শ্রমে শরীর গরম, মন আরও উষ্ণ। গায়ের প্রকাণ্ড লাল জ্যাকেট খুলে ফুরফুরে মনে আমি ব্রেন্টকে বললাম, ‘এ স্বর্গোপকূলে আমার একটা ছবি তুলে দাও।’

আশা পূর্ণ হলো প্রতারণা দ্বীপে


undefined
‘সুপ্রভাত, ঘণ্টাতিনেক পর আমরা ডিসেপশন আইল্যান্ডে পৌঁছে যাব। এ দ্বীপ দুনিয়ার মেলা নাবিককে ধোঁকা দিয়েছে, কিন্তু আজ তোমার প্রত্যাশাটা ঠিকই পূরণ করবে।’ এক বাটি গরম স্যুপ নিয়ে দোদুল্যমান টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতেই এ কথা বলে আমাকে স্বাগত জানাল ব্রেন্ট হিউস্টন। আমাদের জাহাজ তখন দক্ষিণ মহাসাগরে ভাসমান বরফের অন্তহীন জঙ্গলে গুটি গুটি এগিয়ে চলছে। গতকালও জাহাজটি খণ্ড বরফের এই কণ্টকশয্যা পার হয়েছে অক্ষত দেহে। তবে অভিযাত্রী সবাই অক্ষত থাকেননি। অনেকেই সমুদ্রপীড়ায় কুপোকাত হয়ে আজ ব্রেকফাস্টে গরহাজির। বাইরে ঝকঝকে রোদ। পানিতে ছোঁ মেরে মাছ শিকার করছে একটি অ্যালব্যাট্রস। আমি বললাম, ‘কথাটা মনে রেখো ব্রেন্ট, আমার আশা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কিন্তু জাহাজে ফিরব না। তখন ক্যাপ্টেন ডেমেল যদি মাইকের আওয়াজ বাড়িয়ে জাহাজ কাঁপিয়ে অনুপস্থিত যাত্রীর মুণ্ডুপাত করে তো সব শেষ তোমার।’
ব্রেন্ট হিউস্টন আমেরিকার পাখিবিদ, গবেষণার কাজে তৃতীয়বারের মতো অ্যান্টার্কটিকা সফরে এসেছে। আমার প্রথম সফর। প্রতারণা দ্বীপে নাকের ডগায় স্কুয়া আর পিন্টাডো পেট্রেল বসে থাকে বলে গল্প শুনিয়ে সে আমার প্রত্যাশা তুঙ্গে তুলেছে। বইয়ে পড়েছি, শত বছর আগে দক্ষিণ মহাসাগরে পিন্টাডো পেট্রেল দেখে অভিযাত্রী দল বুঝতে পারত, তারা অ্যান্টার্কটিক উপকূলের কাছে এসে গেছে। পেট্রেল পাখির দল অ্যালব্যাট্রস, স্কুয়া আর পেঙ্গুইনের মতো মাসের পর মাস সমুদ্রে ভেসে থাকতে পারে না। রাতে তাদের মাটিতে ফিরতে হয়। সমুদ্রে তাদের উড়তে দেখলে বোঝা যায় ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও মাটি আছে। ব্রেন্ট বলেছে, প্রতারণা দ্বীপে পেট্রেল আর স্কুয়া পাখির দল বাসা বাঁধে। আমি আশা করে আছি, কাছে গিয়ে সেসব দেখতে পাব।
প্রতারণা দ্বীপটি আসলে অ্যান্টার্কটিক উপকূলের এক অগ্নিগিরি। লাভা জমে সাগরের পানির ওপর মাথা তুলেছে বলেই একে দ্বীপ বলা হয়। অগ্নিগিরির জ্বালামুখের মধ্যেও আছে সমুদ্রের পানি। বাইরে থেকে শুধু লাভার পাহাড় মনে হলেও ভেতরে এর বিশাল নিস্তরঙ্গ হ্রদ—দুর্গম দক্ষিণ সাগরে এক বিরল পোতাশ্রয়। তবে জ্বালামুখের যে ফাটল দিয়ে এ হ্রদে জাহাজ ঢুকতে পারে বহুকাল সেটা অনাবিষ্কৃত ছিল। আবিষ্কারের পর মানুষ এর নাম দিয়েছে ‘প্রতারণা দ্বীপ’—যেন এ দ্বীপ আগে ইচ্ছে করে আশ্রয়সন্ধানী নাবিকদের প্রতারিত করেছে।
আমরা সবাই এখন প্রতারণা দ্বীপের দিকে চেয়ে আছি। ব্রেন্ট ও আমি পাখি দেখার জন্য, আর অন্য যাত্রীরা অগ্নিগিরির উত্তপ্ত হ্রদে নামতে উন্মুখ। উত্তেজনার শেষ নেই। দ্বীপের পাথুরে দেয়াল জাহাজের কাছে এসে গেলে সমুদ্রপীড়ায় কাবু অভিযাত্রীরাও মাথা খাড়া করল। ক্যাপ্টেন ডেমেল নিপুণ হাতে জাহাজ চালিয়ে দেয়ালের সুড়ঙ্গ দিয়ে আমাদের নিয়ে গেল অগ্নিগিরির ভেতরে। জাহাজ নোঙর ফেললে আমরা রবারের ডিঙিতে চড়ে ডাঙার দিকে রওনা হলাম। এক দশক আগে অগ্নিগিরির একটা বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এখন সে ঘুমন্ত, চারদিক সুনসান, পানিতে বুদবুদ উঠছে, বাতাসে গন্ধকের গন্ধ।
ডাঙায় পা রেখে উত্ফুল্ল সহযাত্রীরা সমুদ্রস্নানে নেমে গেল। আমাদের প্রত্যাশা তখনো পূরণ হয়নি। চারদিকে স্কুয়া আর পিন্টাডো পেট্রেলের ওড়াউড়ি চলছে। লাভার ফাঁকে ফাঁকে তারা বাসা বেঁধেছে। আমরা পাহাড়ের দেয়াল বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। কাছ থেকে সাধ মিটিয়ে সব দেখতে চাই। অ্যান্টার্কটিকার প্রাণী নির্ভয়ে মানুষের কাছে আসে। তাদের উদ্বেগের কারণ না হয়েই অনেক কাছে যাওয়া গেল। তারপর তৃপ্তমনে আমরা অবতরণ শুরু করলাম।

‘তুষার-কবর’ থেকে বেরিয়ে এলাম


undefined
মাথা ঝাঁকিয়ে বরফ ঝেড়ে কুছ পরোয়া নেই ভঙিতে আমার গাইড বলল, ‘তুষার পড়লেই কি শেরপা থেমে যায়!’ কিছুক্ষণ ধরে তুষার ঝরছিল; এবার জোর বাতাস ছেড়েছে। তীরের মতো তুষারকণা এসে মুখে বিঁধছে। মাথার ওপর ছাতা ধরেও মুখ রক্ষা করা যাচ্ছে না, পালক-পোরা জ্যাকেটটি শুধু দেহ রক্ষা করে চলেছে। শেরপা গাইড ‘আঙ-কামি’ ছাতা আনেনি; ইমজােস ট্রেইলে অকাল তুষারপাতের কথাটা প্রস্তুতিপর্বে তার মনে ছিল না। ‘ছাতা ছাড়া তুমি এখন চলবে কী করে!’—এ কথা বলায় ঘাউড়ামি করে সে আরও জোরে পা চালাচ্ছে।
সাত দিন আগে লুকলা থেকে ইমজােস বেস-ক্যাম্পের উদ্দেশে আমাদের ট্রেকিং শুরু হয়েছে। মে মাসে অক্ষত দেহে এভারেস্ট বেস-ক্যাম্প ট্রেকিং শেষ করে স্ফীত আত্মবিশ্বাসে আমি ইমজােস অভিযান হাতে নিয়েছি। দুই বন্ধু আমার সঙ্গী হয়েছে; তাদের জীবনের প্রথম ট্রেকিং। এক-ট্রেকিং সিনিয়রিটি নিয়ে আমি তাদের ‘ওস্তাদ’ বনে গেছি। শুরু থেকেই অভিযানটির অবস্থা লেজেগোবরে; একটা না একটা অঘটন লেগেই আছে। প্রথম দিন পাঁচ কিলোমিটার পথ চলতে না চলতে এক বন্ধুর নতুন বুটজোড়ার সেলাই খুলে হা হয়ে গেল। মুখ ব্যাদান করা বুট দড়ি-দাড়া দিয়ে বেঁধে সে গুটি গুটি পায়ে ট্রেকিং করছে। তার সঙ্গে আমাদেরও শম্বুকগতি। দিন শেষ হলো, গন্তব্য এল না। বাধ্য হয়ে ‘ফাকডিং’-এর শেরপা-সরাইখানায় রাত কাটালাম; ‘জোরসালে’ যাওয়া হলো না। ভাগ্যক্রমে দুই দিন চলার মতো এক জোড়া পুরোনো জুতা মিলল সেখানে। জুতা আবিষ্কার করে বন্ধুবর চাঙা হলো; কিন্তু আমার দুশ্চিন্তা রয়েই গেল। যথাস্থানে যাত্রাবিরতি হয়নি বলে পরদিনের গন্তব্য ‘নামচে-বাজার’ পৌঁছাতে সকাল-সন্ধ্যা টানা হাঁটতে হবে; মাঝে রাত্রিবাসের স্থান নেই।

সফল জীবনের জন্য…….মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ্


মানবজাতির জীবন বলতেই তার একটি উদ্দেশ্য থাকা চাই।
for a successful life
উদ্দেশ্যহীন জীবনের নেই কোনো মূল্য, নেই কোনো প্রাপ্য। জীবনের যেমন উদ্দেশ্য আছে, তেমনি উদ্দেশ্যেরও রয়েছে জীবন তথা জীবনময়তা। অর্থাৎ উদ্দেশ্যের সততা ও মহত্ত্ব। তাই উদ্দেশ্য হতে হবে সৎ ও মহৎ, যার ছত্রে-ছত্রে থাকে আদর্শের দীপ্তি। জীবনের উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্যের জীবন তথা আদর্শ ও উদ্দেশ্যের শুদ্ধতা ও সততাই হলো সফল জীবনের মূলমন্ত্র। উদ্দেশ্যময়তা ও অলসতা পরস্পরবিরোধী আচরণ। কখনো উভয়ের সম্মিলন হতে পারে না। যে ব্যক্তি জীবনের কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিয়েছে, তার পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ থাকে সে লক্ষ্যের দিকে। সে এদিক-সেদিক মনোযোগ দিয়ে নিজের স্বর্ণের মতো মূল্যবান সময় নষ্ট করতে পারে না। লক্ষ্য নির্ধারণ করে যে জীবন পরিচালনা করে, সে তীব্র বেগে ছুটে ঐ মুসাফিরের মতো যে প্রতিটি মুহূর্ত নিবিষ্ট থাকে আখেরি মনজিলের দিকে অগ্রসর হতে। পৃথিবীর দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য তাকে মুগ্ধ ও প্রলুদ্ধ করতে সামনে এসে দাঁড়ায়, কিন্তু সে দু’চোখ বন্ধ করে পথ চলতে থাকে লক্ষ্যে পৌঁছার প্রত্যাশায়। ছায়াশীতল বিশ্রামস্থান তাকে আরাম ও বিরামের জন্য উদ্বুদ্ধ করে, কিন্তু সে পথ চলতে থাকে মোহ-মুগ্ধতার স্বাদ ছেড়ে। বিচিত্র চাহিদা তার পথকে অবরোধ করে, কিন্তু সে সচল পদবিক্ষেপে এগুতে থাকে সকল বাঁধ-বাধার প্রতিরোধ করে। জীবনের বিভিন্ন উত্থান-পতন, স্খলন ও পদস্খলন তাকে ঠেকিয়ে রাখতে চায়, কিন্তু তাতেও কোনো ছেদ পড়ে না তার ইচ্ছা ও প্রতিজ্ঞায়, তার দৃপ্ত পদচারণায়। লক্ষ্য স্থিরকারী ব্যক্তি কখনো দিকভ্রান্ত হতে পারে না। কারণ, রাস্তা ও আখেরি মনজিল সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট ধারণা থাকে। সামনে থাকে তার একটি সুনির্ধারিত লক্ষ্য। কখনো সে পথ থেকে ফসকে পড়ে না। অসঙ্গত প্রসঙ্গ নিয়ে সময় নষ্ট করে, নি®প্রাণ আনন্দে মেতে ওঠে না। সবদিক থেকে মনোযোগ হঠিয়ে শুধু একদিকেই সে মনোযোগ নিবদ্ধ করে। লক্ষ্য অর্জন হওয়া ও আখেরি মানজিলে পৌঁছা পর্যন্ত তাকে থাকতে হয় কর্মচঞ্চল ও ব্যস্তসচল। তাই জীবনকে সচল ও সফল করার জন্য প্রত্যেকেরই একটি সুচিন্তিত ও সুচিহ্নিত লক্ষ্য থাকা অনিবার্য, অপরিহার্য। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এমন হওয়া চাই, যার সততা ও সত্যতার ওপর অন্তর পূর্ণ আস্থা রাখে, হৃদয় যাকে পরিপূর্ণভাবে সমর্থন করে এবং যা রক্তের মতো প্রতিটি রন্ধ্রে বিচরণ করে। এই লক্ষ্য নির্ধারণই মানুষকে অন্যান্য জীব থেকে বিশিষ্টতা দান করে। মনুষ্যত্ব ও পশুত্বের মাঝে বৈচিত্র্য ও বৈপরীত্যের দেয়াল তোলে। উদ্দেশ্যের সঙ্গে আদর্শের এবং চিন্তার সঙ্গে কর্মের সংযোগ ঘটাতে হবে। চিন্তা হতে হবে আদর্শিক, বাস্তবভিত্তিক ও কর্মমুখী। আর কাজ হতে হবে চিন্তানির্ভর, ফলপ্রসূ ও বাস্তবমুখী। চিন্তাহীন কর্ম ও কর্মহীন চিন্তা দুটোই অúূর্ণ ও অকার্যকর। যে ব্যক্তির জীবনে লক্ষ্যের প্রতি একাগ্রতা ও একাত্মতা সৃষ্টি হবে, তার জীবন অবশ্যি অন্য এক জীবন হয়ে উঠবে, জীবন-সূর্য তার হৃদয়-আকাশে আলোর উদ্ভাস ঘটাবে।

সফল ব্যবসায়ী বশির আহমদ


undefined
দেশে শুধু রেমিটেন্স প্রেরণ নয় সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে আমাদের পরিচিতি ও অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে।
জনাব বশির আহমদ ব্রিটেন তথা ইউরোপে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে একজন পরিচিত মুখ। সফল ব্যবসায়ী ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব। তিনি সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন। বিশ্বাস করেন পরিশ্রমে। শ্রম ও অধ্যবসায় তাকে এনে দিয়েছে অনেক সাফল্যে। চলার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলার অদম্য সাহস ও আত্মবিশ্বাসই তাকে নিয়ে এসেছে আজকের এই অবস্থানে।
সিলেট শহরের কাজলশাহ নিবাসী জনাব চেরাগ আলী খানের দ্বিতীয় পুত্র বশির আহমদ। বেড়ে উঠেছেন সিলেট শহরের আলো বাতাসে। সিলেট এইডেড হাই স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক, মদনমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও বিকম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons